ব্রিটিশ শাসনামলে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় শহরের উন্নয়নে সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও শিক্ষা বিস্তারে জেলার এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত, যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হিসেবে ১৯৬৫ সালে সদর উপজেলার বেতনা নদীর মোহনা থেকে এল্লারচর মরিচ্চাপ নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করেন। সাতক্ষীরার ইতিহাসে এই প্রাণসায়ের খাল নামে পরিচিত।
কালের সাক্ষী হয়ে সাতক্ষীরাকে তার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কেবলমাত্র ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে বুক পেতে রয়েছে। যে প্রাণসায়ের খাল একসময় স্বচ্ছ জলরাশি আর খরস্রোতা ছিল, তা আজ নির্বিকার হয়ে আছে। মানবিক জমিদার প্রাণনাথ যে মহান উদ্দেশ্যে খাল খনন করেছিলেন, সেই মহান লক্ষ্য আজ বিবর্ণ হয়ে গেছে।
শহরের প্রাণ খ্যাত প্রাণসায়ের খাল শহরের পরিবেশহীনতায় আজ বিপন্ন। দখল আর দূষণে বিবর্ণ-প্রাণহীন দুর্গন্ধ আর ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। এক সময় দূরদূরান্ত হতে ব্যবসায়ীরা পালতোলা নৌকায় পসরা সাজিয়ে পণ্য নিয়ে প্রাণসায়ের পাড়ি দিয়ে এই খালের দুই তীরে মোকাম সৃষ্টি করেছিলেন।
মরিচ্চাপ, বেতনা নদীর স্রোতধারা প্রাণসায়েরকে প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটায় পরিপূর্ণ রাখত। কালের বিবর্তনে কুরুচিপূর্ণ মানুষের অসৎ আচরণে ও ভূমিসদস্যুরা প্রাণসায়েরের টুটি চেপে ধরে প্রাণহীন করে ছেড়েছে।
১৯৬৫ সালে প্রাণসায়েরের দুই মাথায় বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্লুইসগেট স্থাপন করা হয়। ফলে খরস্রোতা নদীটির স্রোত বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন থেকেই প্রাণসায়েরের মৃত্যুর দিনক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যার। বর্তমান বর্ষা মৌসুমে শহর ও শহরের আশেপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনের পরিবর্তে জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির বলেন, খালের দুই পাড়ে এসকাভেটর মেশিন চলাচল করার অসুবিধার কারণে প্রাণসায়ের খাল খনন আপাতত বন্ধ আছে। তিনি আরও বলেন, শহরের মধ্যে এই খালটির পরিচর্যা তথা দেখাশোনার ক্ষেত্রে পৌরসভার দায়িত্ব সর্বাধিক; পাশাপাশি জনসচেতনতারও বিকল্প নেই।
পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি বলেন, প্রাণসায়ের খাল কাগজপত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। পৌরসভা দায়িত্ব নিতে চাইলেও আইনগতভাবে তা সম্ভব হয়নি। প্রাণসায়ের প্রাণ ফিরে পাক— এ প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।
টিএইচ